কে এই মিঠু চৌধুরী?

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ইউনিপে টু ইউ এর অফিস সহকারী অর্পনা রানী হাওলাদারের কাছে দেড়শ’ কোটি টাকা ও অফিস পিওন সাদ্দামের কাছে দুই শ’ কোটি টাকা জমা রয়েছে। এরকম বেশ কয়েকজন অফিস পিওনের একাউন্টে কোম্পানির উপদেষ্টা ও পরিচালকরা আরো তিনশ’ কোটি টাকা জমা রেখেছেন। এছাড়া ইউনিপে টু ইউ এর উপদেষ্টা মিঠু চৌধুরীসহ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা জমা রাখা হয়েছে। এই টাকা নিয়ে মিঠু চৌধুরী আত্মগোপন করেছেন। মিঠু চৌধুরী ছাড়াও তার বোন ওয়ালিনা চৌধুরী, ভাগ্নে ইকবাল, ভাগ্নে বউ নাজিয়া শারমিন এর কাছে এই অর্থ রয়েছে বলে জানতে

পেরেছেন গোয়েন্দারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ মার্চ গুলশানের ১০১ নম্বর থাই রিক্রেয়েশন ক্লাবে ইউনিপেটুইউ এর একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে গ্রাহকরা টাকার বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে উপদেষ্টা মিঠু চৌধুরী ও ইমন ৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব দেন। ওই হিসাব অনুযায়ী মিঠু চৌধুরীর কাছে ১৭ শ’ কোটি টাকা, ইমনের কাছে ২ হাজার কোটি টাকা, সাহিনের কাছে ২ শ’ কোটি টাকা, জামশেদের নিকট ৩ শ’ কোটি টাকা, ব্যাংক হিসাবে জব্দ অবস্থায় ৪ শ’ ২০ কোটি টাকা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জমি ক্রয় বাবদ ৩ শ’ ৪৯ কোটি টাকা,সাখাওয়াত সুমনের নিকট ৩ শ’ কোটি টাকা, মুকিতের কাছে ১ শ’ কোটি টাকা, তাহেরের কাছে ১ শ কোটি টাকা, অফিসের কয়েকজন স্টাফের কাছে ৫ শ’ কোটি টাকা ও একশ’ এজেন্টের কাছে ১ হাজার কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে। এসময় মিঠু চৌধুরী বলেন, টাকার পরিমাণ আরো বেশী। সরকারকে কর ফাঁকি দেয়ার জন্য হিসাব কমিয়ে করা হয়েছে। আগামী সভায় আপনাদের কাছে সঠিক হিসাব জানাতে পারবো। এরপর মিঠু চৌধুরী বলেন, ‘আমি মিঠু চৌধুরী আপনাদের টাকা আমানত হিসাবে রেখেছি। সময়মত ফেরত দেবো। ওই সূত্র আরো জানায়, ঢাকার বাংলামটর এলাকায় ইউনিপে টু ইউ-এর কার্যলয়ের অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন অর্পনা রানী হাওলাদার। বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার শিয়ালকাঠিতে। বাবার নাম অনীল চন্দ্র হাওলাদার। প্রথম দিকে তার বেতন ছিল ২০ হাজার টাকা। এক পর্যায় তিনি প্রতারক কর্ণধারদের বিশ্বস্ত সঙ্গীতে পরিণত হন। সেই থেকে তার উত্থান শুরু। ইউনিপে টু ইউ বন্ধ হওয়ার আগে অর্পনা হিসাব ব্যবস্থাপনার কাজ করতেন। ইউনিপে টু ইউ-এর পিওন সাদ্দামের সঙ্গে ইমনের গভীর সম্পর্ক। সাদ্দা নিজে গ্রাহকদের বলেছেন,

সরকারি কর ফাঁকি দেয়ার জন্য ডিরেক্টর ইমন তার কাছে দুই শ’ কোটি টাকা রেখেছেন। ইমনের ভিন্ন নাম দিয়ে তার সঙ্গে করা জয়েন্ট একাউন্টে ওই টাকা জমা রাখা আছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, উপদেষ্টা মিঠু চৌধুরীর বোন ওয়ালিনা চৌধুরী ২৫ হাজার টাকা বেতনে ইউনি কোঅপারেটিভে চাকরি নেন। তার একাউন্টে দেড়শ’ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। মিঠু চৌধুরীর ভাগ্নে ইকবাল কোম্পানির সার্ভার অপারেটর ছিলেন। তিনি টাকার হিসাব রাখতেন। তিনি এই কাজের জন্য বেতনের বাইরে একটি পার্সেন্ট নিতেন। ইউনিপে টু ইউ বন্ধ হওয়ার আগের দিন ইকবাল কোম্পানি থেকে ২ শ’ কোটি টাকার পে-অর্ডার নেন। এছাড়া উপদেষ্টা মিঠু চৌধুরীর ভাগ্নে বউ নাজিয়া শারমিন অফিস কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতেন। বন্ধ হওয়ার দুদিন আগে তিনি তার ভিন্ন নামের এক একাউন্টে ১ শত কোটি টাকা গচ্ছিত রাখেন। অফিসের আরেক স্টাফ নজরুল। তিনি প্রতারক ডিরেক্টর এমএ তাহেরের ঘনিষ্ঠজন। তাহের তার একাউন্টে এক শত কোটি টাকা জমা রেখেছেন বলে জানা গেছে। প্রতারণার শিকার আসাদ বলেন, ইউনিপে টু ইউ এর উপদেষ্টা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদের রক্ষায় প্রশাসনিক কাজ দেখাশোনা করেন মেজর (অব.) মুকিত আল মাহমুদ। তিনি সদস্যদের বিভিন্ন সময় হুমকি দিতেন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় দেখাতেন। তিনি মিঠু চৌধুরীকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছেন বলে তারা জেনেছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলছেন, ইউনিপে টু ইউ এর উপদেষ্টা, কোম্পানির নিয়ন্ত্রক এবং ইউনিল্যান্ড লিঃ এর ডিরেক্টর মনজুর এহসান চৌধুরী (মিঠু চৌধুরী), নির্বাহী পরিচালক মাসুদুর রহমান, কোম্পানির অলিখিত উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুজ্জামান শাহীন, প্রথমে বিগ লিডার পরে ডিরেক্টর সাখাওয়াত সুমন, ডিরেক্টর খন্দকার মুকিত আল মাহমুদ, ইউনি ল্যান্ড লিঃ এর পরিচালক এইচএম আরশাদ উল্লাহ, এমএ তাহের, ইউনি মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ ডিরেক্টর এমএ জলিলকে আটক করলে টাকা আদায় করা সম্ভব হবে। তাদের দাবি সরকার কমিশন গঠন করে প্রতারিত গ্রাকদের টাকা ফিরিয়ে দিক। কে এই মিঠু চৌধুরী? পুরো নাম মঞ্জুরুল এহসান চৌধুরী মিঠু। কুষ্টিয়ার মজমপুর রেল গেট এলাকায় তাদের পৈত্রিক বাড়ি। বাবার নাম ওয়ালিউল বারী চৌধুরী। কোম্পানির উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় তিনি বনশ্রীর বি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২৮ নম্বর বাসায় থাকতেন। তিনি নিজেকে ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলামের ভাতিজা বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছে পরিচয় দিতেন। ইউনিপেটুইউর উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত তিনি। তবে তার অবস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক রহস্য রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সংক্ষিপ্ত নাম ব্যবহার করায় পুলিশ তাকে শনাক্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়া আছেন বলে অনেকের ধারণা। এই মিঠু চৌধুরী নামে-বেনামে গাড়ি, রিয়েল স্টেট ও চলচ্চিত্র ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। একটি পুরনো জাতীয় দৈনিকের মালিকানা কিনে তিনি সম্পাদক-প্রকাশকও হয়েছেন। গত দুই বছরে এসব ব্যবসায় তার বিনিয়োগ অন্তত কয়েক শ’ কোটি টাকা।

Related posts

Leave a Comment